কলকাতা 

NEET Question Analysis : নিট প্রশ্নপত্র নিয়ে স্যান্ডফোর্ডের বিশ্লেষণ: এই বছরের প্রশ্নে ভেরিয়েশন বেশি, চ্যালেঞ্জ প্রচুর, সবমিলিয়ে মডারেট

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

নিট প্রশ্নপত্র নিয়ে স্যান্ডফোর্ডের বিশ্লেষণ

নায়ীমুল হকের প্রতিবেদন: সারাদেশে ডাক্তারিতে ভর্তির পরীক্ষা ‘নিট’ হয়ে গেল গত রবিবার ১৭ জুলাই। টানটান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ প্রস্তুতির পর প্রায় পৌনে ১৯ লাখ ছাত্র-ছাত্রী নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দেয় এ দিন।

পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্রই ছাত্র-ছাত্রীদের মনে উঁকিঝুঁকি মারতে থাকে, কেমন হল তাদের পরীক্ষা, প্রশ্নপত্র কেমন ছিল, প্রশ্নের ট্রিক্সগুলো ঠিকমত বুঝে উত্তরটা লিখে আসতে পেরেছি তো, আর সকলের কেমন হয়েছে- এসব হাজারো প্রশ্ন মিলিয়ে উৎকণ্ঠায় ভরে থাকে ছাত্র-ছাত্রীদের মন। আর তাদের সঙ্গে পাল্লা দেন অভিভাবকেরা এবং আত্মীয়-স্বজনেরাও। বন্ধু বান্ধব সহ সবার মনে একই প্রশ্ন, এবারের কাট-অফ মার্কস কোথায় পৌঁছবে? আমার প্রাপ্ত নম্বর কী হবে!!

Advertisement

ছাত্র-ছাত্রীদের মনের কথা আঁচ করে, একদম দেরি না করে, পরীক্ষার দিনই অর্থাৎ রবিবার রাত্রে নিট এর তিন বিশেষজ্ঞ মাস্টার মশাইকে নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল অনলাইনে খোলামেলা আলাপচারিতা, প্রশ্ন পর্ব এবং যাবতীয় সংশয় নিরসনের।

 স্যান্ডফোর্ড অ্যাকাডেমির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সেখ জসিমউদ্দিন মন্ডল

আলাপচারিতার শুরুতে ছাত্র-ছাত্রীদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন স্যান্ডফোর্ড অ্যাকাডেমির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সেখ জসিমউদ্দিন মন্ডল। তিনি বলেন সফলতা পাওয়া নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কিন্তু জীবনে সততার সঙ্গে লড়াই করলে সাফল্য আবসেই। সুতরাং নিষ্ঠার সঙ্গে সৎ ভাবে যারা পরিশ্রম করে চলেছো, তাদের এই অধ্যাবসায়কে আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরাও বছরভর তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি, যাতে করে এই লড়াইয়ের সুফল ঘরে আসতে পারে। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এই প্রচেষ্টা আমাদের জারি থাকবে।

প্রশ্নপত্র কেমন হয়েছে, এ প্রসঙ্গে এদিনের আলোচনার সূত্রপাত করেন জীববিদ্যার বিশিষ্ট শিক্ষক অধ্যাপক শুভময় দাস। তিনি বলেন, সকলেরই ধারণা ছিল এবার কুড়ি মিনিট বেশি পাওয়ায় একটু বেশি প্রশ্ন এটেম্পট করার সুযোগ পাওয়া যাবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। প্রশ্নপত্রে জুড়েছে এবার কয়েকটি নতুন ধরনের প্রশ্ন, যার সমাধানে তুলনামূলক সময় লাগে বেশি। ম্যাট্রিক্স ম্যাচিং টাইপ প্রশ্ন সমাধানে অনেকটাই সময় লেগে যায়, অনেক সময় চার-পাঁচগুণ সময় লেগে যেতে পারে। assertion reasoning এর প্রশ্নতেও সময় লাগে বেশি, এছাড়া কম করে আটটি প্রশ্ন এসেছে ম্যাথমেটিক্যাল ক্যালকুলেশন থেকে। তবে বায়োলজিতে এবার সব থেকে বড় পরিবর্তন যেটা এসেছে, তা হল এন সি ই আর টি-এর বাইরে থেকে এসেছে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ টা প্রশ্ন। এটা অনেকেরই ধারণার বাইরে ছিল। এবার বায়োলজিতে প্রশ্ন ক্লাস ইলেভেন এবং টুয়েলভ থেকে ছিল প্রায় সমান সমান। সব মিলিয়ে বায়োলজির প্রশ্ন সম্পর্কে শুভময় বাবু বলেন গতবারের তুলনায় একটু শক্তই ছিল এবং অবশ্যই ছিলে ডেসক্রিপটিভ, যাতে কিছুটা সময় বেশি খেয়ে নেয়।

               ফিজিক্সের বিশিষ্ট শিক্ষক প্রিয়ম দে

ফিজিক্সের প্রশ্ন কেমন ছিল এ প্রসঙ্গে স্বনামধন্য শিক্ষক প্রিয়ম দের কথা শুনে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকেরা নড়েচড়ে বসেন। তিনি বলেন ফিজিক্সের প্রশ্ন এবার তুলনামূলক সহজ হয়েছে। এনসিইআরটি থেকে 50 টার মধ্যে ৩৭ টার মতো প্রশ্ন এসেছে, বাকিটা বাইরে থেকে। ক্লাস ইলেভেন থেকে প্রায় ৪০% এবং টুয়েলভ থেকে ৬০% । ছাত্র-ছাত্রীদের হিসেব অনেকটাই মিলে গেছে, মেকানিক্স চ্যাপ্টার থেকে প্রশ্ন ছিল সবথেকে বেশি, মর্ডান ফিজিক্স থেকে, অপটিক্স থেকেও প্রশ্ন ছিল ভালোই। সব মিলিয়ে ফিজিক্সের প্রশ্ন এ বছর তুলনামূলক ফেভারেবল হয়েছে শুনে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকেরাও অনেক আশ্বস্ত।

‘নিট’ পরীক্ষার্থীদের কাছে কেমিস্ট্রি বরাবর একটা প্রিয় বিষয়। মার্কস উঠিয়ে আনে অনেকটাই। স্বাভাবিকভাবেই কেমিস্ট্রির প্রতি ভরসা তাদের বলা যায় ফিজিক্সের থেকে অনেকখানি বেশিই। এবারের কেমিস্ট্রি প্রশ্নপত্র কেমন ছিল- এ বিষয় নিয়ে বলেন ছাত্র-ছাত্রীদের প্রিয় শিক্ষক ড.ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন এবারের কেমিস্ট্রি প্রশ্ন বেশ মডারেট ছিল। যেমন দীর্ঘ উত্তরের প্রশ্ন ছিল, তেমনই ছিল মুখে মুখে সমাধান করা যায় এরকম প্রশ্নও। ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি থেকে গাণিতিক প্রশ্ন ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের পছন্দের। ইলেকট্রো কেমিস্ট্রি থেকেও গোটা তিনেক পছন্দের প্রশ্ন ছিল। তবে বেশ কিছু তথ্যমূলক প্রশ্নও ছিল। ১৬টার টার মত প্রশ্ন ছিল ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি থেকে, ১৭ টা প্রশ্ন ছিল ইনোর্গানিক কেমিস্ট্রি থেকে। ক্লাস ইলেভেন থেকে প্রশ্নপত্র ছিল প্রায় ৬০% আর টুয়েলভ থেকে ছিল ৪০% ।

এদিন প্রশ্নপত্রের ভালো-মন্দ দিক নিয়েও বেশখানিক আলোচনা হয়, ছাত্র-ছাত্রীরা ঋদ্ধ হয়।

    কেমিস্ট্রির শিক্ষক ড.ফারুক আহমেদ

এরপর শুরু হয় কাট অফ নিয়ে আলোচনা। ছাত্র-ছাত্রীরা রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছিল এই আলোচনা শোনার। সব মিলিয়ে এ বছর কাট অফ মার্কস কমার কোনও আশা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না বরং বাড়লে ২-৫ নম্বর বাড়তেও পারে বলে মত প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞেরা।

তবে সব মিলিয়ে ৫৭০-ও যদি এসে যায় কাট অফ মার্কস, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই বলে নিজের মত জানান অধ্যাপক শুভময় দাস। তিনি তাঁর সার্বিক মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন প্রশ্নপত্রের প্রকৃতি যেভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তাতে আগামী দিনের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে চ্যালেঞ্জ আরও অনেক বাড়ছে, বাড়ছে বই খুঁটিয়ে পড়ার প্রয়োজনীয়তাও। সঙ্গে সঙ্গে কেবলমাত্র এনসিআরটি-এর উপর ভরসা না করে এখন দৃষ্টি প্রসারিত করতে হবে আরো খানিকটা দূরে এবং বাড়াতে হবে গভীরত্ব। তবে বিষয়ের উপর যারা দাঁত ফোটাতে পারবে অর্থাৎ ভিত মজবুত হবে যাদের, তাদের সফলতা কিন্তু আগামী দিনে অনেকটা নিশ্চিত হতে যাচ্ছে।

জীববিদ্যার বিশিষ্ট শিক্ষক অধ্যাপক শুভময় দাস।

অনলাইন বৈঠক শেষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় আলাপচারিতা এত খোলামেলা সফলভাবে করার জন্য প্রাণপ্রিয় ছাত্র-ছাত্রী, তাদের অভিভাবক সহ উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং স্যান্ডফোর্ড অ্যাকাডেমির সকলকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা প্রদান করেন বিশিষ্ট শিক্ষক ও স্যান্ডফোর্ড অ্যাকাডেমির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর পান্থ মল্লিক। তিনি বলেন, আগামী দিনে ‘নিট’ প্রস্তুতি যেমন চ্যালেঞ্জের দিকে এগোচ্ছে, তেমনই ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে থাকতে গুণী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহযোগিতায় স্যান্ডফোর্ড অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ দিনের আলাপচারিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন অভিভাবকেরা, আন্তরিক কৃতজ্ঞতা পেশ করেন তাঁরা। এ ধরনের আরও বিশ্লেষণাত্মক আলাপচারিতা পরীক্ষা পদ্ধতিকে বুঝতে সহজ করবে বলে তাঁদের মত প্রকাশ করেন।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ